অনুবাদ সাহিত্য
বাংলা অনুবাদ কাব্যের সূচনা হয় মধ্যযুগে।
ক) সংস্কৃত ভাষা থেকে আগত
রামায়ণঃ বাল্মীকি গঙ্গা নদীর তীরে বসে সংস্কৃত ভাষায় ‘রামায়ণ’ রচনা করেন। প্রধান চরিত্র – রামচন্দ্র, লক্ষ্মণ, সীতা, রাবণ ইত্যাদি। রামায়ণের প্রথম বাংলা অনুবাদক কৃত্তিবাস ওঝাঁ। গিয়াস উদ্দিন আজম শাহ এর নির্দেশে কৃত্তিবাস বাংলায় ‘রামায়ণ’ রচনা করেন। রামায়লে প্রথম মহিলা অনুবাদক চন্দ্রাবতী। চন্দ্রাবতী ছিলেন বাংলা সাহিত্যের প্রথম মহিলা কবি। তিনি কিশোরগঞ্জ অঞ্চলের মানুষ ছিলেন। তার পিতার নাম দ্বিজ বংশীদাস।
মহাভারতঃ মহাভারত সংস্কৃত ভাষায় প্রথম রচনা করেন বেদব্যাস।এ কাব্যের মূল বিষয় হল – কৌরব পাণ্ডবের গৃহবিবাদ এবং কুরুক্ষেএ যুদ্ধের ঘটনাবলী। কুরুক্ষেএ যুদ্ধের ব্যাপ্তিকাল ছিল ১৮ দিন। এর মূল চরিত্র -অভিমন্যু, অর্জুন, কর্ণ, গান্ধারী, দ্রোপদী প্রভৃতি। দ্রোপদী পাঁচ ভাইয়ের একক স্ত্রী। মহাভারতের প্রথম বাংলা অনুবাদক কবীন্দ্র পরমেশ্বর। অনূদিত গ্রন্থের নাম ‘পরাগলী মহাভারত’। শ্রীকর নন্দী অনূদিত গ্রন্থের নাম ‘ছটিখানী মহাভারত’। মহাভারতের শ্রেষ্ঠ বাংলা অনুবাদক কাশীরাম দাস।
ভগবতঃ ভগবত এর রচয়িতা বেদব্যাস। ‘ভগবত’ এর দশম ও একাদশ অধ্যায়ের অনুসরণে মালাধর বসু ‘শ্রীকৃষ্ণবিজয়’ কাব্য রচনা করেন। মালাধর বসুর উপাধি ‘গুণরাজ খান’।
খ) আরবি-ফারসি-হিন্দি ভাষা থেকে
মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্যের মুসলমান কবিগণের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান রোমান্টিক প্রণয়োপাখ্যান। ফারসি বা হিন্দি সাহিত্যের উৎস থেকে উপকরণ নিয়ে রচিত অনুবাদমূলক প্রণয় কাব্যগুলোতে প্রথমবারের মত মানবীয় বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত হয়েছে। মুসলমান কবি রচিত প্রণয়োপাখ্যান কাব্যগুলো নিম্নরূপঃ
ভাষা | অনুবাদগ্রন্থ | মূলগ্রন্থ/উৎস | লেখক |
ফারসি |
ইউসুফ জোলেখা | জামী রচিত ‘ইউসুফ ওয়া জুলয়খা’ | শাহ মুহাম্মদ সগীর, আবদুল হাকীম, গরীবুল্লাহ। |
লায়লী-মজনু | নিজামী রচিত ‘লায়লা ওয়া মজনুন’ | দৌলত উজির বাহরাম খান, মুহম্মদ খাতের | |
জঙ্গনামা | গরীবুল্লাহ, বাহরাম খান | ||
গুলে বকাওলী | ইজ্জতুলল্লাহ রচিত ‘তাজুলমূলক গুল-ই বকাগুলী | নওয়াযিস খান, মুহাম্মদ মুকীম | |
হাতেম তাই | আলিফ লায়লা ওয়া লায়লা | সাদতুল্লাহ, সৈয়দ হামজা | |
ফারসি |
সপ্ত পয়কর | নিজামী রচিত
‘হফত পয়কর’ |
আলাওল |
সিকান্দার নামা | নিজামী রচিত ‘সিকান্দার নামা’ | ||
সয়ফুলমুলক-বদিউজ্জআমান | আলিফ লায়লা ওয়া লায়লা | ||
ধর্মীয় গ্রন্থ |
তোহফা (নীতিকাব্য) | ইউসুফ গদা রচিত ‘তোহফাতুন নেসাফেহ’ | |
নূরনামা | আবদুল হাকিম | ||
নবী বংশ | স’লাবা বিরচিত ‘কিসাসুল আমবিয়া’ | সৈয়দ সুলতান | |
হিন্দি |
সতীময়না ও লোরচন্দ্রানী | কবি সাধন রচিত ‘মৈনাসত’ | প্রথম ও দ্বিতীয় খন্ড : দৌলত উজির
তৃতীয় খন্ড : আলাওল |
পদ্মাবতী | মালিক মুহম্দ জায়সী রচিত ‘পদমাবৎ’ | আলাওল | |
মধুমালতী | মনঝন রচিত ‘মধূমালত’ | মুহম্মদ কবীর, সৈয়দ হামজা, মুহম্মদ চুহর, শাকের মুহম্মদ |
ইউসুফ জোলেখা : শাহ মুহাম্মদ সগীর অনূদিত ‘ইউসুফ জোলেখা’ গ্রন্থটি বাংলা সাহিত্যের প্রথম প্রনোয়াখ্যান। শাহ মুহাম্মদ সগীর রোমান্টিক প্রনোয়াখ্যান ধারার প্রথম কবি এবং প্রথম বাঙালি মুসলমান কবি। সুলতান গিয়াসউদ্দীন আজম শাহের পৃষ্ঠপোষকতায় চতুর্দশ শতকের শেষে বা পঞ্চদশ শতকের প্রথমে শাহ মুহম্মদ সগীর ‘ইউসুফ জোলেখা’ কাব্য রচনা করেন। এই কাব্যের কাহিনীর পটভূমি ছিল ইরান।
লাইলী-মজনু: লাইলী-মজনু কাব্যের মূল উৎস আরবি লোকগাঁথা।
নূরনামা: কবি আবদুল হাকিমের ‘বঙ্গবাণী’ কবিতার বিখ্যাত পক্তি:
- ‘যে সবে বঙ্গেতে জন্মি হিংসে বঙ্গবানী।
সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।’
- ‘দেশি ভাষা বিদ্যা যার মনে ন জুয়ায়
নিজ দেশ ত্যাগী কেন বিদেশ ন যায়।’
- ‘সেই বাক্য বুঝে প্রভু আপে নিরঞ্জন।’
- ‘তে কাজে নিবেদি বাংলা করিয়া রচন।
নিজ পরিশ্রমে তোষি আমি সর্বজন।’